ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট :
18 August, 2020
প্রকাশের সময় : সন্ধ্যা,07:25 pm
আপডেট : সন্ধ্যা,07:27 pm
নীল, এই নীল। ওঠ না!
-কি হয়েছে? ভোর ভোর ডাকছিস কেন?
ভোর কোথায়? সবে তিনটে বাজে।
– ঐ তো! ডাকছিস কেন? বাজে জ্বালাতন।
তাই, না?এই দিলাম পানিতে ফেলে। ঘুমুলে তোর আর হুশ থাকে না |
হুড়মুড় করে উঠলাম ৷ পানি? ওহ এটা তো নৌকা | আবছা অন্ধকারে সাদা নীল পলিথিন আর বাঁশের খাপের সাধারণ কাজ, “কারুকাজ” হয়ে চোখে ধরা দিল। আমার বাঁপাশে রোদ বসে আছে৷ আমার বাহুতে ওর হাত৷ আমার তো আর প্রেমিক হওয়া সাজে না তাই বন্ধুই সই। রোদকে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না৷ তবে ও সবসময়ই আমার রোদ,ঝলমলে ৷
উঠতে পারবি?
– হুম।
– বাইরেটা দেখ৷
আমার ঘুমের সুবিধার জন্য ফুঁটো সমৃদ্ধ একটা পর্দা লাগানো হয়েছিল৷ তারই মধ্য দিয়ে আলতো বৃষ্টির ছাঁট আমার মুখে লাগছে। পর্দা টেনে দিতেই আস্ত একটা ঝলমলে উপগ্রহ সজোরে জ্যোৎস্না বর্ষণ করতে লাগলো৷ প্রথমে ঘুমের সীমানা দেয়াল, তারপর চোখের জানালা, এক এক করে ভেঙে গেল৷ সেই জ্যোৎস্না বর্ষণের ধারায় প্লাবিত হলো আমার ধীরে ধীরে ,সযত্নে বড় হতে থাকা মস্তিষ্ক।
এই দৃশ্যও চোখে দেখার ছিল, রোদ! আমি কি বেঁচে আছি? নাকি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি ?
– “অপার্থিব”।
– তুই কি আমার কাঁধে মাথা রাখবি?
রোদকে আমি আর কখনো বলতে পারবো না যে তোকে আমি খুব ভালোবাসি৷ কখনোই ভুলতে পারবো না৷ হয়তো মৃত্যুর পরও না। প্রতিটা মূহূর্তে ও আমার পাশে থেকেছে। আমার সমস্ত অপূর্ণ সাধ পূরণ করেছে৷ আজ যে মাহেন্দ্রক্ষণে আমি উপস্থিত , তার ক্রেডিটও ওর পাওনা৷ গত পাঁচটা পূর্ণিমায় আমরা নৌকায় থেকেছি৷ আজ ষষ্ঠ পূর্ণিমা৷ সফল পূর্ণিমা৷ সম্ভবত শেষ পূর্ণিমা ৷ খাদে পড়ে যাওয়ার ঠিক আগে আমি সব পাচ্ছি। জীবনকে ভালোবাসতে শিখছি। জানি, ভালোবাসা অর্থহীন। অন্তত, আমার সাজে না।
কয়েক বছর আগে একটা উপন্যাসে একটা কবিতার লাইন পড়েছিলাম “মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব , তুমি আছো আমি আছি “৷ ” তুমি ” -র অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু সেই লাপাত্তা “আমি”এতদিনে ধরা দিয়েছে৷ শুনেছি ঈশ্বর মানুষের সাধ পূরণ না করে তাকে নেন না। আমার ক্ষেত্রে কথাটা সত্যি হলো না৷ জীবনের চির আকাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য দেখিয়ে, প্রাণের লোভে চোখ টাটিয়ে দিয়ে ডামাডোল বাজিয়ে আমায় নিয়ে যাচ্ছেন। “Every Breath Counts”.
আমার আফসোস রইল আরো একটু আলোর ৷ একটু খানি স্মৃতির, অনেকখানি শান্তির, অজস্র কবিতার , অল্পকিছু জ্যোৎস্না ধারার ৷ আমি চাই৷ চাইছি, অজস্র বার ও হাতটা শক্ত করে ধরুক,রোদ তার বৃষ্টি দিয়ে আমার কাঁধ ভেজাক ৷ অন্তত একবার বলি, ভালোবাসি৷ কিন্তু, অনির্বায যে ৷
পৃথিবীর সমস্ত রহস্যের সমাধান হবে মৃত্যুর পর। তবুও মৃত্যু মানুষের দ্বারে অনাপ্যায়িত , অনাকাঙ্ক্ষিত৷ ঠিক যেমন জ্ঞান, সততা আর প্রেম ৷
অনিবার্যের নিবারণ নেই জানি। তবুও ঘন্টা কয়েকের জন্য জ্ঞানী (মৃত) হতে চাই। তারপর , জীবনান্দের কবিতা পড়তে পড়তে বলতে চাই সেই সত্য।
ভোর হচ্ছে। তুই আমায় নদীতে ফেলে দে । সেই ভালো। ভিজিয়ে ফেলেছিস্ I
রোদ হাসলো। সূর্য ও।
তৃষ্ণা বাড়ছে৷ মিটবে কি?